চিরন্তন সত্য কথা হলেও নিজের বয়স বাড়ার বিষয়টি আমরা কেউই কেন জানি মেনে নিতে চাই না। আপনাকে যদি এখন হুট করে কেউ অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার এ, অ্যান্টি এজিং ক্রিম সাজেস্ট করে আপনার হয়তো অস্বস্তি হবে, যদিও আপনি ফিল করেন যে স্কিন অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে। সময় আর বয়স যতই বাড়ে, দায়িত্ব-কর্তব্য এবং অভিজ্ঞতার পাল্লাও বাড়তে থাকে। সেই সাথে চেহারায় আসে বুড়িয়ে যাওয়ার সংকেত। এটা অবশ্যম্ভাবী কিন্তু কেউই চাই না স্কিনে বয়সের ছাপ আসুক।
অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিনের সঠিক ধাপ
আমরা যদি বয়স অনুযায়ী স্কিনকেয়ারের ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকি এবং কোন ইনগ্রিডিয়েন্স অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসাবে কাজ করে এই ইনফরমেশনগুলো জেনে রাখি, তাহলে স্বাভাবিক এজিং প্রসেস নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেকআপের পুরু স্তরে ত্বক লুকাতেও হবে না। চলুন জেনে নেই অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার রুটিনের সঠিক ধাপগুলো।
অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার কাদের জন্য?
কখন থেকে আমাদের অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করা উচিৎ জানেন কি? অনেকে হয়তো ভাবছেন বয়স বাড়লে যখন স্কিনে রিঙ্কেল পরবে, তখন অ্যান্টি এজিং ক্রিম মাখবো আর রাতারাতি সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এটা পুরোটাই একটা ভুল কনসেপ্ট। স্কিনে একবার পিগমেন্টেশন চলে আসলে অথবা চামড়া কুঁচকে গেলে সেটা ঠিক করা মোটামুটি দুরহ ব্যাপার।
আর মেকআপ দিয়ে কতই বা ঢাকবেন? বিশেষজ্ঞদের মতে; ২০-৩০ বছরের মধ্যে আমাদের স্কিনের কোলাজেন লুজ হওয়া শুরু করে মানে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। কিন্তু সময় মেপে সবার জীবনে যে একই ঘটনা ঘটবে, এমনটা নয়। কারও হয়তো বেশ আগে আগেই চেহারায় দেখা দেয় বলিরেখা। বিশেষ করে আমাদের লাইফস্টাইল; চারপাশের দূষণ আর আবহাওয়াজনিত কারণে স্কিনে তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ চলে আসে। ত্রিশ এর পরেও যেন আয়নায় নিজেকে দেখে মনে হয় সেই কুড়ি বছরের মত ইয়াংগার লুকিং স্কিন; সেজন্য কিন্তু ২০-২২ বছর বয়স থেকেই কেয়ার নিতে হবে। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সেটার সুফল অবশ্যই আপনি পাবেন!
কিভাবে করবো অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ার?
- প্রোপার স্কিন কেয়ার রুটিন মেনটেইন করা।
- যে প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করছেন সেগুলো আপনার স্কিনকে প্রোটেক্ট করবে কি না।
- আর কোন ইনগ্রিডিয়েন্স আপনার জন্য ভালো হবে এটা বের করা।
- হেলদি ডায়েট আর সময়মত বিশ্রাম।
১) ক্লেনজিং ও স্ক্রাবিং
স্কিন থেকে এক্সসেস অয়েল, ঘাম কিংবা ডার্ট রিমুভের জন্য অবশ্যই ভালো মানের ক্লেনজার ব্যবহার করতে হবে। ন্যাচারাল এক্সট্রাক্ট যুক্ত (যেমন- গ্রীন টি, অ্যালোভেরা, লেমন) ফেইস ওয়াশে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই সহ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট কনটেন্ট থাকে, যা দৃশ্যমান বয়স্ক ভাব থেকে আপনার ত্বককে সুরক্ষা দিবে। ডেড স্কিন সেল আর ব্ল্যাক হেডস রিমুভের জন্য সপ্তাহে দুইদিন স্ক্রাবিং করবেন। সুদিং আর ময়েশ্চার প্রপারটিজ আছে এমন স্ক্রাবার বেছে নিতে পারেন আর বড় বিডস যুক্ত, হার্শ ফরমুলার স্ক্রাবার এড়িয়ে চলবেন।
২) টোনিং
টোনার আপনার ত্বকের পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে, রাফনেস রিপেয়ার করে এবং স্কিনের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে। ন্যাচারাল ইনগ্রিডিয়েন্স, হায়ালুরনিক এসিড, মিল্ক প্রোটিন কিংবা টি-ট্রি এলিমেন্টযুক্ত টোনার বেছে নিতে পারেন। স্কিন কেয়ারের যেই পার্টটা আমরা অনেকেই গুরুত্ব না জেনে স্কিপ করি সেটা হচ্ছে টোনিং। কিন্তু ইয়াংগার লুকিং, হেলদি আর রেডিয়েন্ট স্কিন পেতে টোনার ইউজ করা মাস্ট। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ইনগ্রিডিয়েন্স এর টোনার পাওয়া যায়, আপনার ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন অনুসারে বেছে নিতে পারেন।
৩) সিরাম অ্যাপ্লাই
ত্বকের ময়েশ্চার ব্যালেন্স আর ফার্মনেস ঠিক রাখতে অ্যান্টি এজিং স্কিনকেয়ারে পেপটাইড সিরাম (Peptide Serum), রেটিনল (Retinol), অ্যাসকরবিক এসিড (ভিটামিন সি), হায়ালুরোনিক এসিড (Hyaluronic acid) ইত্যাদি ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন। ডার্ক স্পট কমানোর জন্য ব্রাইটেনিং সিরামও এখন পাওয়া যায়। হায়ালুরোনিক এসিড কার্যকরী একটি উপাদান যেটা ময়েশ্চার রিটেইন করে এবং বুড়িয়ে যাওয়া থেকে স্কিনকে রক্ষা করে।
ভালো অ্যান্টি এজিং ইনগ্রিডিয়েন্স হচ্ছে ভিটামিন-এ ডেরিভেটিভস (রেটিনোড) এবং ভিটামিন-সি। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে সতেজ রাখে আর ত্বকের ভেতর থেকে কাজ করে হেলদি গ্লো দেয়। পেপটাইড সিরামে স্কিন বেনিফিসিয়াল বিভিন্ন অ্যামাইনো এসিড ( Amino acid) আছে যেটা নারিশমেন্টের পাশাপাশি কোলাজেন প্রোডাকশনেও (Collagen Production) ভুমিকা রাখে। সিরামের মাধ্যমে হাইলি কনসেনট্রেটেড পাওয়ারফুল উপাদান খুব লাইট ফর্মুলার সাহায্যে স্কিনে দিতে পারছেন এবং এতে আপনার ত্বক সর্বোচ্চ বেনিফিট পাবে। তবে অবশ্যই নিয়ম জেনে সঠিকভাবে সিরাম অ্যাপ্লাই করবেন।
৪) ময়েশ্চারাইজিং
অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ারে ময়েশ্চারাইজার কোনোভাবে বাদ দেয়া যাবে না, কেননা বয়সের সাথে সাথে ত্বকের সিবাম (ন্যাচারাল অয়েল) প্রোডাকশন কমে যায় আর স্কিন ড্রাই হতে শুরু করে। প্রোপার হাইড্রেশনের অভাবে ফাইন লাইন, রিংকেল, ডার্ক প্যাঁচ সহ আরও অনেক স্কিন প্রবলেম দেখা দেয়। কোলাজেন আর ইলাস্টিন প্রোটিন সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার স্কিনকে স্মুথ করে আর রিংকেল কমাতে হেল্প করে।
চেষ্টা করবেন ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, জোজোবা ওয়েল, অলিভ ওয়েল, এপরিকট ওয়েল, রোজ ওয়েল, অ্যালোভেরা, মধু, শিয়াবাটার, রেটিনল, এমিনো এসিড (Amino acids), এএইচএস (AHS), অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, কোলাজেন অথবা ন্যাচারাল এক্সট্রাক্টযুক্ত ক্রিম ইউজ করতে, কারণ এই উপাদান গুলো হাইড্রেশনের পাশাপাশি রেডিয়েন্ট আর হেলদি স্কিনের জন্যও কাজ করবে। ত্বকে পুষ্টি জোগাতে আর মসৃণ করতে নাইট ক্রিম বেশ বড় ভুমিকা রাখে, তাই এই পার্টটাও মিস করবেন না।
৫) প্রোটেকটিং
সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি UVA এবং UVB থেকে সুরক্ষার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করাটা বাধ্যতামূলক। সানস্ক্রিন কিন্তু শুধু ত্বককে সানবার্ন থেকেই রক্ষা করে না, এটি প্রিম্যাচিউর (Premature) স্কিন এজিং–কে দূরে রাখে এবং স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। প্রোটেকটিং পার্ট টা বাদ দিলে স্কিনকে যতই নারিশমেন্ট করুন, সেটা লং লাস্টিং হবেনা। এর পেছনে সায়েন্টিফিক কারনটা হচ্ছে সূর্যরশ্মির প্রভাবে ত্বকের কোলাজেন ভেঙ্গে যায়, যেটা ইলাসটিনে প্রভাব ফেলে চামড়া পাতলা আর শুষ্ক করে দেয়। ঘামের সমস্যা থাকলে অয়েল ফ্রী, ময়েসচার-রিচ, ওয়াটার ফরমুলেটেড সানস্ক্রিন বেছে নিতে পারেন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ফর্মে (জেল, পাউডার, ক্রিম, লোশন) এখন সানস্ক্রিন পাওয়া যায়।